গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে রক্তক্ষরণ কেন হয়?

গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় রক্তক্ষরণ হয়। এটি বেশ ঝুঁকির। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫০২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শামিমা নার্গিস নীলা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের গাইনি অবস বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে রক্তক্ষরণ- এটি আসলে কী? কী কী কারণে এই রক্তক্ষরণ হচ্ছে?
উত্তর : একটি মা যখন গর্ভবতী হয় প্রাথমিক পর্যায়ে, কখনো ছয় সপ্তাহ, আট সপ্তাহের দিকে, রোগী এসে হয়তো আমাদের বলে, সমস্যা হচ্ছে। কারো কারো অল্প, কারো কারো অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্তপাতের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। খুব প্রচলিত যে কারণটি সেটি অ্যাবোরশন। অ্যাবোরশনের আবার অনেক ধরন রয়েছে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থার শুরুতে রক্তপাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো অ্যাকটোপিক প্রেগনেনসি। জরায়ুর বাইরে যদি কখনো গর্ভধারণ হয় একে বলি অ্যাকটোপিক প্রেগনেনসি। আরেকটি বিষয় রয়েছে, মোলার প্রেগনেনসি। এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা যায় রক্তক্ষরণ হয়।
প্রশ্ন : প্রাথমিক পর্যায় বলতে কোন পর্যায় বলা হয়?
উত্তর : ১২ সপ্তাহের মধ্যে যদি হয়, তাহলে আমরা বলি প্রাথমিক পর্যায়। আবার তিন মাস থেকে ছয় মাসের মধ্যেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে দেখা যায় প্রাথমিক পর্যায়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে বেশি আসে।
প্রশ্ন :অ্যাকটোপিক প্রেগনেনসি কী?
উত্তর :গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে রোগীরা সাধারণত রক্তক্ষরণ নিয়ে আসে। এটা কি অ্যাবোরশন না কি অ্যাকটোপিক প্রেগনেনসি সেটি আমাদের বের করতে হয়।
এই অ্যাকটোপিক প্রেগনেনসি নিয়ে বলি। সাধারণত আমাদের গর্ভধারণটি হয় জরায়ুর ভেতরে। জরায়ুর ক্যাভিটির ভিতরে।এই জায়গাতে না এসে যদি টিউবে আসে,নালিতে আসে অথবা পেটের কোনো একটি দিকে আসে। জরায়ু ছাড়া তার বাইরে যেকোনো জায়গায় চলে আসতে পারে। আর এদের মধ্যে দেখা যায় টিউবটাতে বেশি আসে। এই ধরনের রোগীগুলো আমাদের কাছে আসে। তা ছাড়া তাদের জটিল তলপেটে ব্যথা থাকে। কোনো কোনো রোগী পুরোপুরি রক্তশূন্য থাকে। এদের পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়। এই ধরনের রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দিতে হবে। সার্জারিতে রোগীকে যেতে হবে। এটি সফলভাবে করতে পারলে নাটকীয় একটি ফল পাই। রোগীর জীবন বাঁচাতে পারি তখন। আর যদি এসব রোগীরা না বুঝে বাসায় থেকে যায়,তাহলে এই ধরনের রোগীদের পরিণতি খুবই খারাপ হয়।
প্রশ্ন : সেপটিক অ্যাবোরশন বিষয়টি সম্পর্কে একটু বলুন?
উত্তর : সেপটিক অ্যাবোরশন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের মাতৃমৃত্যু হারের ১০ ভাগ হলো এই সেপটিক অ্যাবোরশন। গর্ভপাতই তবে এর সাথে সংক্রমণ রয়েছে। এই গর্ভপাতের সাথে জরায়ু,জরায়ুর আশপাশে সংক্রমণ হয়ে যায়। এতে করে জ্বর নিয়ে আসে,তলপেটে ব্যথা থাকে। রোগীগুলো খুব টক্সিক থাকে। এই রোগীগুলোকে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আসতে হবে এবং হাসপাতালে নিয়ে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। দেখা যায় কি যারা স্বেচ্ছায় গর্ভপাত করে, সঠিক জায়গায় গিয়ে না, সঠিক উপায়ে না, যেখানে সেখানে করছে তাদের ঝুঁকি থেকে যায়। এজন্য আমি বলব যারা বাচ্চা রাখতে চায় না তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবে। যেটাই করবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করবে।