হার দিয়ে আসর শুরু চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের

চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। আর সেই খেলায় পাকিস্তান চূড়ান্ত আনপ্রেডিক্টেবল। ঘরের মাঠ, চেনা দর্শক, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন— পাকিস্তানের পক্ষে পাল্লা ভারী থাকার কথা। প্রচলিত আছে, পাকিস্তানিদের নিয়ে খোদ পাকিস্তানের মানুষই বাজি ধরে না। মাঠেও প্রমাণিত হলো সেটি। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান-বাবর আজমরা। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আয়োজক পাকিস্তানকে ৬০ রানে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে নিউজিল্যান্ড।
টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে নিউজিল্যান্ড। ৫০ ওভারে ৫ উেইকেটে ৩২০ রান সংগ্রহ করে দলটি। জবাবে ৪৭.২ ওভারে ২৬০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই এলোমেলো পাকিস্তান। ২২ রান তুলতেই হারায় ২ উইকেট। ওপেনার সৌদ শাকিল ৬ রান করে উইল ও’রোর্কের বলে ম্যাট হেনরির হাতে ক্যাচ তুলে দেন। পাকিস্তান অধিনায়ক রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৩ রান। ও’রোর্কের বলে গ্লেন ফিলিপসের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় রিজওয়ান।
দুজনের বিদায়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন বাবর আজম। দীর্ঘ সময় পর হেসেছে তার ব্যাট। তবে, ৯০ বলে ৬৪ রানের ইনিংসটি আদতে দলের উপকারে আসেনি। মিচেল স্যান্টনারের বলে কেইন উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাবর। এরপর আর সেভাবে জয়ের পথে ছুটতে পারেনি পাকিস্তান।
মাঝে আগা সালমান আর শেষে খুশদিল শাহ লড়াই করেছেন সর্বোচ্চ দিয়েই। ২৮ বলে ৪২ রান করেন সালমান। খুশদিলের ব্যাট থেকে আসে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৯ রান। ৪৯ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ১০টি চার ও ১ ছক্কায়। খুশদিল শেষ দিকে ক্ষীণ আশা জাগিয়েছিলেন। তবে, তাকেও ফিরিয়ে পাকিস্তানের জয়ের পথ বন্ধ করে দেন ও’রোর্ক।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ও’রোর্ক ও অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার নেন ৩টি করে উইকেট। ২ উইকেট পান ম্যাট হেনরি।
এদিকে, আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই কিউই ওপেনার উইল ইয়ং ও ডেভন কনওয়ে সম্ভাবনাময় সূচনা এনে দেন। ৭.৩ ওভারে ৩৯ রানের জুটি বেশিদূর এগোতে পারেনি কনওয়ের বিদায়ে। ১৭ বলে ১০ রান করে আবরার আহমেদের বলে বোল্ড হন কনওয়ে। কেইন উইলিয়ামসনের ওপর ভরসা ছিল। তবে, বড় ম্যাচের তারকা হতাশ করেছেন এদিন। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই নাসিম শাহর শিকার হন উইলিয়ামসন। ১ রান করে উইকেটের পেছনে পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের তালুবন্দি হন তিনি।
পিচের মোমেন্টাম বুঝতে সময় নিয়েছেন নিউজিল্যান্ড তারকা ডেরিল মিচেল। ২৪ বলে ১০ রান করে সেট হওয়ার আগেই ধরেন ফেরার পথ। হারিস রউফের বলে শাহিন আফ্রিদির হাতে ক্যাচ দেন মিচেল। ৭৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে কিউইরা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন দুই ব্যাটার উইল ইয়ং ও টম লাথাম। এই জুটিতে আসে ১১৮ রান। চলতি আসরের প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি দেখেছে দর্শকরা। সেটি ধরা দিয়েছে ইয়ংয়ের ব্যাটে। ১১৩ বলে ১০৭ রানের ইনিংসটি এই তারকা সাজান ১২টি চার ও ১টি ছক্কার মারে। ৯৪.৬৯ স্ট্রাইক রেটে খেলা ইনিংসটি থামান পেসার নাসিম শাহ। ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার ফাহিম আশরাফ।
ততক্ষণে অর্ধশতক পার করেন টম লাথাম। ফিফটির পর ব্যাটে গতি বাড়ে লাথামের। পাকিস্তানি বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন। সঙ্গে যোগ দেন গ্লেন ফিলিপস। ৩৪ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনিও। লাথাম-ফিলিপস জুটিতে আসে ১২৫ রান। হারিস রউফের বলে ফখর জামানের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ফিলিপস খেলেন ৩৯ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস। ইনিংসটি তিনি সাজান ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায়। ১০৪ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় লাথাম অপরাজিত থাকেন ১১৮ রানে।
পাকিস্তানের পক্ষে নাসিম শাহ ও হারিস রউফ ২টি করে উইকেট নেন। আবরার আহমেদ নেন ১টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ৫০ ওভারে ৩২০/৫ (ইয়ং ১০৭, কনওয়ে ১০, উইলিয়ামসন ১, মিচেল ১০, লাথাম ১১৮*, ফিলিপস ৬১ ; আফ্রিদি ১০-০-৬৮-০, নাসিম ১০-০-৬৩-২, আবরার ১০-০-৪৭-১, হারিস ১০-০-৮৩-২ , খুশদিল ৭-০-৪০-০, সালমান ৩-০-১৫-০)
পাকিস্তান : ৪৭.২ ওভারে ২৬০/১০ (শাকিল ৬, বাবর ৬৪, রিজওয়ান ৩, ফখর ২৪, সালমান ৪২, তাহির ১, খুশদিল ৬৯, আফ্রিদি ১৪, নাসিম ১৩, হারিস ১৯, আবরার ০*; হেনরি ৭.২-১-২৫-২, ও’রোর্ক ৯-০-৪৭-৩, ব্রেসওয়েল ১০-১-৩৮-১, ফিলিপস ৯-০-৬৩-০, স্যান্টনার ১০-০-৬৬-৩, স্মিথ ২-০-২০-১)
ফলাফল : নিউজিল্যান্ড ৬০ রানে জয়ী।