ইনকিউবেটরে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে মাসে ৩ লাখ টাকা আয়

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে সফল হয়েছেন যুবক লিটন ইসলাম (৩২)। এসব হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করে তিনি মাসে আয় করছেন প্রায় ৩ লাখ টাকা। স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার এই উদ্যোগ।
উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কাশিপুর খুশির বাজার এলাকায় গিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা লিটন ইসলামের সঙ্গে। লিটন ইসলাম জানান, প্রায় এক যুগ আগে তার বাবা খলিলুর রহমান হাঁসের ডিম থেকে তুষ পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করতেন। পরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ব্যবসায় যুক্ত হয়ে ইনকিউবেটর মেশিন কেনেন তিনি। সেই যন্ত্রের মাধ্যমে এখন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে তুলছেন।
লিটন আরও জানান, বাড়ির পাশে পুকুর থাকায় হাঁস পালনে তেমন সমস্যা হয় না। বড় হাঁসগুলো প্রতিদিন ডিম দেওয়ায় বাইরের ডিমও বেশি কিনতে হয় না। ফলে অল্প খরচে বেশি লাভ হচ্ছে। দেশি সাদা ও কালো জাতের পাশাপাশি তিনি চীনের জিনডিং, বেইজিং, পিংকি, ইংল্যান্ডের খাকি ক্যাম্পবেল ও ভারতের রানারসহ বিভিন্ন জাতের হাঁস প্রজনন করছেন। এখন খামার ঘিরেই তার বড় স্বপ্ন।
বর্তমানে তার খামার বীরগঞ্জ উপজেলায় হাঁস প্রজনন খামার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ৬ দিন পর ইনকিউবেটরে ফোটানো হাঁসের বাচ্চা বুকিংয়ের মাধ্যমে খামারি ও উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন তিনি। বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন। তার সফলতা দেখে জেলার অনেক তরুণ উদ্যোক্তাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
লিটন ইসলাম জানান, প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ছোট ইনকিউবেটর কিনেছিলেন তিনি। পরে সফলতা আসায় ৭ হাজার ও ১২ হাজার হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বড় ইনকিউবেটর স্থাপন করেন, যাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং বিক্রি হয় ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়। মাসে প্রায় ১৩ হাজার হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করে তিনি আয় করছেন প্রায় ৩ লাখ টাকা। জেলার খানসামা, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, নীলফামারীর সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা ও লালমনিরহাটে এসব বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে।
লিটনের দাবি, সরকারি সহযোগিতা পেলে প্রসেসিং প্লান্ট তৈরি করে হাঁস মোটাতাজা করে মাংস বাজারজাত করার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলম বলেন, ভ্যাকসিন ওষুধসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে লিটনকে। তিনি ইতোমধ্যে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার হাঁস ও ডিম বিক্রি করেছেন। তার সফলতা দেখে আরও অনেক নারী-পুরুষ হাঁসের খামার করতে উৎসাহিত হবেন এবং কর্মসংস্থান তৈরি হবে।