কিডনির অসুখ ও চিকিৎসা

ক্রনিক কিডনি ডিজিস থাকার কারণে যখন পুরোপুরি দুটি কিডনি ৯০ ভাগের ওপর নষ্ট হয়ে যায় তখন কিডনি ফেইলিওর হয়ে থাকে। ঠিক তখনই তার সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে হয়। আজ ৪ জুন এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৫৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নেফ্রোলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. হারুন-আর-রশীদ।
প্রশ্ন : কিডনি ফেইলিওর কী এবং এটি কেন হয়?
উত্তর : কিডনির এই রোগকে ক্রনিক কিডনি ডিজিস (দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ) বলা হয়। আর এই ক্রনিক কিডনি ডিজিস থাকার কারণে যখন পুরোপুরি দুটি কিডনি ৯০ ভাগের ওপর নষ্ট হয়ে যায় তখন আমরা বলি কিডনি ফেইলিওর। একে এন্ড স্টেইজ কিডনি ফেইলিওরও বলা হয়। সেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব না। কিডনির কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। যখন কোনো পুরুষ অথবা নারী অনেক দিন থেকেই ডায়াবেটিকসে ভুগে থাকেন অথবা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন অথবা নোফ্রাইটিস থাকে তাহলে তার কিডনি ডিজিস হওয়ার আশংকা থাকে। আর সে যদি তখন সঠিক চিকিৎসা না নেয় তাহলে ক্রনিক কিডনি ডিজিস থেকে ধীরে ধীরে তাঁর কিডনি ফেইলিওর হবে।
প্রশ্ন : ক্রনিক কিডনি ডিজিসের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো কী?urgentPhoto
উত্তর : এই রোগ এমন একটি রোগ যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব না। কারণ এর কোনো উপসর্গ হয় না। অনেকে মনে করেন আমার ডায়াবেটিকস হয়েছে এর সঙ্গে কিডনির কী সম্পর্ক। অথবা আমার উচ্চ রক্তচাপ আছে আমার কিনডি কী করে নষ্ট হবে। শুধু নেফ্রাইটিস হলে চোখ ফুলে যায়, পায়ে পানি আসে এই দুটো লক্ষণ দেখে বোঝা যায় তার কিডনির এই রোগটি হয়। এ ক্ষেত্রে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাদের রক্তের ইউরিয়া ক্লিটিন ইলেক্ট্রোলাইট করি এবং ইউরিন টেস্ট করি। পুরুষের ক্ষেত্রে সিরাম ক্রিয়েটনিন ১.৩ নিচে এবং নারীদের ক্ষেত্রে সিরাম ক্রিয়েটনিন ১.২ এর নিচে এবং তার ইউরিনে যদি কোনো মাইক্রো অ্যালবোমিন না যায় তাহলে তাঁর কিডনি আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু যদি সিরাম ক্রিয়েটনিনের ওপরে থাকে তাহলে বলা যায় তাঁর ক্রনিক কিডনি ডিজিস হয়েছে। তখন তার সঠিক চিকিৎসা সেই সময় থেকেই শুরু করতে হবে।
প্রশ্ন : এই রোগের চিকিৎসা কী?
উত্তর : যার ডায়বেটিস থাকে তাকে অবশ্যই ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখতে হবে, ব্লাড সুগার ৬ এর নিচে থাকবে, নাস্তা খাওয়ার পরে ব্লাড সুগার ৮ এর নিচে হবে এবং ৩ মাস পর ব্লাড সুগার কেমন ছিল সেটা জানার জন্য এইচপিএওয়ানসি নামের একটি পরীক্ষা করতে হবে। যার রেজাল্ট হতে হবে ৬ থকে ৭ এর মধ্যে হতে হবে। আর কোনো কারণে যদি ইউরিনে অ্যালবোমিন বা মাইক্রো অ্যালবোমিন যায় সেটা চিকিৎসা করে বন্ধ করতে হবে। খাদ্যের মধ্যে সমতা আনতে হবে। কার্বহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন এই তিনটির সমন্বয় করে খাবার খেতে হবে, কিছু ভিটামিন থেকে হবে, কিছু ব্যায়াম করতে হবে, কোনোভাবেই মোটা হওয়া যাবে না, লবণ পরিহার করতে হবে, মিষ্টি খাওয়া যাবে না। এই নিয়মগুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে আপনার কিডনি আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা থাকবে না। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাদের ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলে রাখতে হবে। ১৮০ বাই ৯০-এর ওপরে যেন তাদের ব্লাড প্রেসার না যায়। যে ধরনের ব্লাড প্রেসারের ওষুধই লাগুক না কেন সেটা দিয়েই আপনার ব্লাড প্রেসারটি কন্ট্রোল করতে হবে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বলা হয়ে থাকে যাদের ডায়বেটিকস আছে অথবা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাহলে এসিইনিভিটার এবং এআরবি এ ধরনের ওষুধ দিলে কিডনি রোগ ভালো হয়।
প্রশ্ন : ক্রনিক কিডনি ডিজিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য পরামর্শ কী?
উত্তর : যখন কারো ৮৫ ভাগের ওপর কিডনি নষ্ট হবে তখন আমরা তাঁকে কিডনি ডায়লেসিস করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। ডায়লেসিস সাধারণত দুই ভাগে করা হয়ে থাকে একটি হলো মেশিনে রক্ত পরিশোধিত করা আর আরেকটি হলো পেটের ভিতর যে পেরিটোনিয়াল মেমব্রিন থাকে তাতে যদি আমরা বিশুদ্ধ পানি দিয়ে দেই তাতেও রক্ত পরিশোধিত হবে। যাকে আমরা বলি পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস। এ ছাড়া যাদের মা-বাবা অথবা নিকট আত্মীয়র সাথে রক্তের গ্রুপ মিল রয়েছে তাদের একটি কিডনি ট্রান্সফার করে তাকে সুস্থ জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে কিডনি দাতার শারীরিক কোনো সমস্যা হবে না। সে দুইটা কিডনি থাকলে ৮০ বছর বাঁচতো আর একটি কিডনি থাকলেও ৮০ বছরই বাঁচবে।
প্রশ্ন : কিডনি ট্রান্সফার চিকিৎসাটি আমাদের দেশে কতটা সফল হচ্ছে?
উত্তর : আমাদের দেশে সেই ১৯৮২ সাল থেক কিডনি সংযোজন হয়। এখন প্রায় ৮ থেকে ১০টি সেন্টার আছে যেখানে কিডনি ট্রান্সফার করা হয়। আমাদের দেশে এখন প্রায় ৯৮ থকে ৯৯ শতাংশ সফল কিডনি ট্রান্সফার করা হয় এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হচ্ছে।