প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হলে চিকিৎসা কী

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তার চারিদিকে একটি গ্রন্থি থাকে। এটি আকারে অনেকটা সুপারির মতো। এই মাংস পিণ্ডকে প্রোস্টেটগ্রন্থি বলা হয়। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে থাকে। এর মধ্যে একটি হলো প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হওয়া। তবে দেশেই এর অনেক আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৯৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এন আই ভূইয়া। বর্তমানে তিনি স্কয়ার হাসপাতালে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: প্রোস্টেটগ্রন্থির সমস্যায় চিকিৎসার জন্য কী কী করতে পারি।
উত্তর : চিকিৎসা নির্ভর করে কোন ধরনের সমস্যা নিয়ে আসছে তার ওপর। উপসর্গগুলো কিন্তু অন্য কারণেও হতে পারে। প্রস্রাবের থলিতে সংক্রমণ হলে হতে পারে। প্রস্রাবের নালিতে সংক্রমণ হলে হতে পারে। প্রস্রাবের থলিতে যদি কোনো পাথর হয়, তাহলেও হতে পারে। তাহলে প্রথম কাজ হলো রোগীর কাছ থেকে ইতিহাস নেওয়া এই সমস্যাটা কতদিন থেকে। পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নেওয়ার পর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, নিজে হাত দিয়ে পরীক্ষা করা, সেই সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে কিছু পরীক্ষা করতে পাঠানো। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, এটি আসলেই প্রোস্টেটের সমস্যা কি না।
এরপর আমরা একে ভাগ করি মাঝারি সমস্যা, অল্প সমস্যা বা বেশি সমস্যা হিসেবে। সেই অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যেমন অল্প সমস্যার ক্ষেত্রে আমরা তাকে কিছু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, পানিপানের পরিবর্তন, নিয়মকানুন বলে দিই- এগুলো পরিবর্তন করে দিলেই উনি ভালো থাকবেন। আর মাঝারি সমস্যার ক্ষেত্রে ওনাকে হয়তো কিছু ওষুধপত্র দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আজকাল অনেক উন্নত ওষুধ বাজারে এসেছে। এগুলো খেলে সে অনেক আরাম বোধ করে। কিন্তু একটি পর্যায় গিয়ে দেখা যায়, ওষুধ আর কাজ করছে না। তখন আমরা বলি হয়তো একটি অস্ত্রোপচারে যেতে হতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় বেশি সমস্যা। এত বেশি সমস্যা যে বোঝাই যাচ্ছে ওষুধে আর কাজ হবে না। তখন সার্জিক্যাল চিকিৎসা দিতে হবে।
তবে আসার কথা যে এই সার্জারির জন্য কোনো কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন নেই। প্রস্রাবের রাস্তায় যন্ত্র দিয়েই এটা সম্ভব। সিস্টোস্কোপ বলে একটি যন্ত্র আছে, এটি দিয়ে প্রোস্টেটগ্রন্থিকে পুরোপুরি দেখা সম্ভব।
দেখে, দুটো পদ্ধতি রয়েছে একে বের করার। নিয়মিত যে কনভেনশনাল পদ্ধতি রয়েছে, একে ডাক্তারি ভাষায় বলি টিওআরপি। নারকেল যেভাবে কুরানো হয়, সেভাবে মেশিন দিয়ে কুরিয়ে কুরিয়ে আনা।
এ ছাড়া বর্তমানে সর্বাধুনিক চিকিৎসা হলো লেজারের মাধ্যমে। প্রস্রাবের রাস্তায় যন্ত্র ঢুকিয়ে দিয়ে লেজারের মাধ্যমে পুরো গ্রন্থিকে আলাদা করে প্রস্রাবের থলিতে পার করে দেওয়া। তারপর যেই প্রোস্টেটগ্রন্থি ঢুকে গেল এবার আরেকটি যন্ত্র দিয়ে কিমার মতো তৈরি করে বের করে নিয়ে আসি। এটি সবচেয়ে আধুনিক। এতে যে সুবিধা হয়, প্রস্রাবের রাস্তায় যে নল দেওয়া হয় এটি পরের দিনই খুলে দেওয়া সম্ভব। এই জন্য রোগীকে বেশি দিন হাসপাতালে থাকতে হয় না। সে খুব দ্রুত স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যেতে পারে। এই অস্ত্রোপচারে রক্তক্ষরণ তেমন হয় না। কাজেই রোগীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু রোগী আসে বিভিন্ন কারণে বা হার্টের অসুখের কারণে এমন ওষুধ খায় যেটা রক্তকে তরল রাখে। আমরা বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের সময় সেটি বন্ধ করে অস্ত্রোপচার করি। কিন্তু লেজারের মাধ্যমে করার সুবিধা হলো, সেই ওষুধ বন্ধ না করেই অস্ত্রোপচার করা যায়। কাজেই লেজার হলো সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি আমাদের দেশে এখন সম্ভব।
প্রশ্ন : দেশের বাইরে আর আমাদের দেশে চিকিৎসার বেশ-কম কী।
উত্তর : খুব বেশি বেশকম নেই। আমরা যা পদ্ধতি বললাম এর প্রচলন সারা বিশ্বে আছে।
তবে এতক্ষণ যা বললাম, সেটি হলো প্রোস্টেটগ্রন্থির আকার বৃদ্ধি। তবে পাশাপাশি আরেকটি জিনিস রয়েছে। প্রোস্টেটগ্রন্থির ক্যানসার।
যখনই ক্যানসার আমরা ধারণা করি মাংস পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয় সেটি আসলে ক্যানসার কি না। তারপর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ধারণ করতে হয় এটি কি শুধু প্রোস্টেটেই সীমাবদ্ধ, নাকি অন্য কোথাও ছড়িয়ে গেছে। যদি প্রোস্টেট সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে আমরা বলি র্যাডিক্যাল চিকিৎসা।
তবে বাইরের দেশের সঙ্গে একটু পার্থক্য আছে যে প্রোস্টেট অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়া, এখানে পেট কেটে বা পেট ফুটো করে ল্যাপারেস্কোপির মাধ্যমে করছি। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে আরেকটি পদ্ধতি চালু আছে পেট ফুটো করে রোবটিক সার্জারি। এ দিকে আমরা পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশে এখনো রোবট নেই। রোবট অনেক উন্নত বিশ্বে আছে। এটা শুধু মাত্র ক্যানসার যদি প্রোস্টেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সেই ক্ষেত্রে সম্ভব। এ ছাড়া যদি ক্যানসার প্রোস্টেটটা ছড়িয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি সারা বিশ্বে যা আমাদের দেশেও তাই। এই চিকিৎসাগুলোতে আমরা পিছিয়ে নেই।