রিওভাইরাস কী, লক্ষণ ও প্রতিকার
দেশে প্রথমবার রিওভাইরাস (রেসপিরেটরি এন্টারিক অরফান ভাইরাস) শনাক্ত হয়েছে। পাঁচজনের শরীরে ব্যাট রিওভাইরাস শনাক্ত করেছে ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলোজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)।তবে কারও ক্ষেত্রে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।
পাঁচজনের শরীরে এই ভাইরাস পেয়েছে ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)। শীতকালে রিওভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এটা ছড়ায়। জানা গেছে, ১৯৫০ সালে বিশ্বে প্রথম রিওভাইরাস শনাক্ত হয়।
রিওভাইরাস কী
রিওভাইরাস Respiratory Enteric Orphan Virus সংক্ষেপে রিওভাইরাস নামে পরিচিত। এটিকে ‘অরফান’ বলা হয় এই কারণে যে, এটা রোগ সৃষ্টি করে না। কিন্তু অন্যান্য রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। রিওভাইরাস এমন একটি ভাইরাস, যা সাধারণত প্রাণী বা মানুষের মধ্যে অন্ত্রের সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। পানির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস; যা শিশুদের ডায়রিয়া বা জ্বরের সৃষ্টি করে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ৩-৬ দিনের মধ্যেই উপসর্গ দেখা দেয়। তবে এ ভাইরাস তুলনামূলকভাবে কম ভয়াবহ ও সাধারণত সহজেই চিকিৎসা করা যায়।
যেভাবে ছড়ায় রিওভাইরাস
রিওভাইরাস অনেক আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছে, যা শ্বাসতন্ত্রের রোগের সঙ্গে এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ বা পেটের অসুস্থতার সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটা সচরাচরই পাওয়া যায় কিন্তু মস্তিষ্কের প্রদাহ পাওয়া গেছে খুব বিরল। বাংলাদেশে যে রিওভাইরাস পাওয়া গেছে সেটা বাদুড় থেকে এসেছে। অর্থাৎ বাদুড়ের রিওভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে।
রিওভাইরাসের অনেকগুলো ধরণ রয়েছে, যা বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সংক্রমিত প্রাণীর লালা, মল-মূত্রের মাধ্যমে দূষিত খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে অন্যের শরীরের প্রবেশ করতে পারে রিওভাইরাস।
শ্বাসতন্ত্রের সঙ্গে থাকা, বিভিন্ন রোগ, পেটের পীড়ার সঙ্গে থাকা রিওভাইরাসের সংক্রামকতা বা সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা নেই। মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটায় যে রিওভাইরাস, তার সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা আছে।
গবেষকরা বলছেন, রিওভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। আক্রান্ত হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। মারাত্মক হলে নিউমোনিয়া, এমনিক এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। আর এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রিওভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য শীত মৌসুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেয়ার ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।
যেসব লক্ষণ দেখে রিওভাইরাস চিনবেন
– ডায়রিয়া-পানি জাতীয় পাতলা মল, যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
– জ্বর-শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
– বমি- বমি করা, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পর।
– পেটে ব্যথা- অন্ত্রের অস্বস্তি বা পেটের ব্যথা।
– শক্তি কমে যাওয়া- শরীর দুর্বল অনুভূতি বা ক্লান্তি।
কতটা মারাত্মক?
রিওভাইরাস সাধারণত মারাত্মক নয়। তবে এটি গুরুতর ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। সেক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা না পেলে এটি জীবনহানির কারণ হতে পারে। তবে এটি সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ভালোভাবে নিরাময়যোগ্য।
এ ভাইরাস সংক্রমণ কারও কারও ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, এমনিক এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
রিওভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় সরাসরি অ্যান্টিভাইরাল কোনো ওষুধ নেই, লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে রোগীকে। রিওভাইরাস যদি গুরুতর সংক্রমণ ঘটায় বিশেষ করে এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কে প্রদাহ হয় তাহলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে, অক্সিজেন থেরাপি বা প্রয়োজনে লাইফ সাপোর্ট দিতে হবে।
শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের কোনো সমস্যায় সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে রোগীকে। ভাইরাসের চরিত্রই হচ্ছে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যেতে পারে বা খারাপও হয়ে যেতে পারে। রিওভাইরাসের মৃদু সংক্রমণ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, তবে গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রতিরোধ
– রিওভাইরাসের প্রতিরোধের জন্য টিকা (রিওভাইরাস ভ্যাকসিন) আছে, যা শিশুদের জন্য দেওয়া যেতে পারে।
– হাত ধোয়া, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও খাবারের সুরক্ষা এ ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সহায়ক।
যেহেতু বাদুড় থেকে রিওভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া গেছে, সেহেতু নিপাহ ভাইরাসের পাশাপাশি রিওভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না, গাছের নিচের পড়ে থাকা ফল, ফাটা বা আধা খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। যেকোনো ফল, সবজি খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
লেখক : ডা. মো. কামরুজ্জামান, কামরুল সহযোগী অধ্যাপক বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট।