কীভাবে ওঠবস করলে স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী?

বর্তমানে ব্যস্ততম জীবনে অনেকের কাছেই জিমে যাওয়া একপ্রকার বিলাসিতা। সময়ের অভাব, তার উপর জিম কিংবা খেলাধুলা ক্লাসে অংশ নেওয়া মানেই বাড়তি খরচ। আবার প্রতিদিন নিয়ম করে যাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও থাকে অনিশ্চয়তা। এসব কারণেই অনেকেই এখন বাড়িতেই শরীরচর্চার দিকে ঝুঁকছেন, তাও আবার কোনো সরঞ্জাম ছাড়াই। এমন ব্যায়ামের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে স্কোয়াট। এই ব্যায়ামটি অনেকটা ওঠবসের মতো হলেও, আসল কাজ হলো ওঠা আর বসা। তবে সঠিকভাবে করতে হলে উরু, পশ্চাৎদেশ, শিরদাঁড়া, মাথা ও দুই হাতের অবস্থানের প্রতি খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ২০টি স্কোয়াট করার চেষ্টা করুন। এই ওঠবসের মাধ্যমে বেশ কিছু উপকার পেতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্কোয়াটের উপকারিতা কী কী?
মন ও মেজাজ উন্নত হয়
দিন শুরু করার আগে ২০ বার ওঠা আর বসা করলেই যে মন ও মেজাজ ভাল হয়ে যায়, তা দিন কয়েক পর থেকে টের পেতে শুরু করবেন। গত দিনের খারাপ মুহূর্তগুলো, সকালের ক্লান্তি, আলস্য কেটে গিয়ে ঝরঝরে হয়ে যাবে শরীর ও মন। আর মানসিক স্বাস্থ্যের এই উন্নতির জন্য কোনো ওষুধ নয়, প্রয়োজন কেবল শরীরকে সক্রিয় রাখা। শরীরচর্চা করলে ‘হ্যাপি হরমোন’ অর্থাৎ ‘এন্ডোরফিন’ নিঃসৃত হয়। আর তাতেই মেজাজ ভালো হয়ে যায়।
শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে
স্কোয়াটে বসা এবং ওঠার নিয়মটি অভ্যাস করলে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে। এ ছাড়া মস্তিষ্কের সঙ্গে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চলনের সমন্বয় বজায় রাখার ক্ষেত্রেও উপকারী ব্যায়াম এটি।
পেশির নমনীয়তা বাড়ে
নিয়মিত স্কোয়াট করলে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। শরীরের নীচের অংশের পেশি মজবুত হয়। বিশেষ করে গোড়ালি, হাঁটু এবং পশ্চাদ্দেশ সক্রিয় থাকে বলে এই অংশগুলির নমনীয়তা বাড়ে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
২০ বার ওঠা-বসা করলেই অনেক পরিমাণে ক্যালোরি ঝরবে। শরীরের নীচের অংশের অধিকাংশ পেশি এই ব্যায়ামে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ক্যালোরি বেশি পরিমাণে ঝরে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গাঁট ও হাড় মজবুত করে
স্কোয়াটের ফলে দেহের হাড় এবং গাঁটের স্বাস্থ্য ভাল হয়। হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে, পেশি মজবুত হয়, গাঁটের নমনীয়তা বাড়ে। রোজ স্কোয়াট করলে সাইনোভিয়াল তরল উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। আর তাতেই লুব্রিকেটেড হয় গাঁট।
হার্ট ভালো হয়
উচ্চ রক্তচাপ কমানো, হার্টের ক্ষমতা বাড়ানো, যে কোনও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্কোয়াটের সুনাম রয়েছে। তবে আগে থেকে সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এই ব্যায়াম করা উচিত।
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে
কর্টিসল, অর্থাৎ ‘স্ট্রেস হরমোন’ কমাতে স্কোয়াট কার্যকরী। পাশাপাশি, ‘হ্যাপি হরমোন’ অর্থাৎ এন্ডোরফিনের মাত্রা বাড়াতে পারে। ‘গ্রোথ হরমোন’ এবং টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে পারে বলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
সবচেয়ে সহজ স্কোয়াট করার নিয়ম
– দুইটি পা কাঁধের সমান সমান এনে ব্যাবধান তৈরি করে দাঁড়ান। পায়ের পাতাগুলো সামনের দিকে মুখ করানো থাকবে। হাত সামনে প্রসারিত থাকবে।
– দুই পায়ে সমান ভর থাকবে। বাইরের দিকে বার করা থাকবে ছাতি। একইভাবে উল্টো দিকে বাইরের দিকে বার করা থাকবে পশ্চাৎদেশ।
– এবার কল্পনা করুন, আপনার পিছনে কোনো চেয়ার রাখা আছে। ধীরে ধীরে পা না নড়িয়ে, চেয়ারে বসার চেষ্টা করুন।
– নীচে নামার পর খেয়াল করুন, মেঝের সঙ্গে উরুর তলার দিক সমান্তরালে আছে কি না। এই ভঙ্গিতে কয়েক সেকেন্ড বসে থাকুন।
– এবার নিতম্বের প্রধান পেশি গ্লুটিয়াল পেশিতে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান।
– প্রতিদিন সকালে এই সেটটি ২০ বার করার চেষ্টা করুন। মানসিক ও শারীরিক উপকার মিলতে পারে।
সূত্র : হেলথলাইন