যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তি : কী কী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে?

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক মাল্টি বিলিয়ন পাউন্ডের পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। “অ্যাটলান্টিক পার্টনারশিপ ফর অ্যাডভান্সড নিউক্লিয়ার এনার্জি” নামে পরিচিত এই চুক্তির লক্ষ্য হলো নতুন পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর দ্রুত নির্মাণ করা এবং উচ্চ জ্বালানি-নির্ভর খাতগুলো—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ডাটা সেন্টারে নির্ভরযোগ্য ও নিম্ন-কার্বন শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করা। খবর আল জাজিরার।
চুক্তির অংশ হিসেবে ব্রিটেনের বৃহত্তম জ্বালানি সরবরাহকারী সেন্ট্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এক্স-এনার্জির সঙ্গে মিলে উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের হার্টলপুলে ১২টি পর্যন্ত অ্যাডভান্সড মডুলার রিঅ্যাক্টর তৈরি করবে। এতে প্রায় ১৫ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি আড়াই হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে, মার্কিন নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হোলটেক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় সংস্থা ইডিএফ এনার্জি এবং যুক্তরাজ্যের রিয়েল এস্টেট ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ট্রাইটাক্স যৌথভাবে নটিংহ্যামশায়ারে প্রায় ১১ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের (১৫ বিলিয়ন ডলার) এসএমআর চালিত ডাটা সেন্টার নির্মাণ করবে।
এছাড়া ব্রিটিশ রোলস-রয়েস ও মার্কিন বিডব্লিউএক্সটি’র বিদ্যমান সহযোগিতার পাশাপাশি নতুন বাণিজ্যিক প্রকল্পেও কাজ হবে।
যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আটটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যা ইডিএফ এনার্জি দ্বারা পরিচালিত। এর মধ্যে পাঁচটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, আর তিনটি উৎপাদন বন্ধ করে ডিকমিশনিং প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০-এর দশকে নির্মিত এসব কেন্দ্র এখন কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের মোট বিদ্যুতের প্রায় ৩০ শতাংশ এসেছে বায়ুশক্তি থেকে, যা দেশটির সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎসে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ পারমাণবিক শক্তি থেকে উৎপাদিত হয়।

কোন ধরনের রিঅ্যাক্টরে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
চুক্তিটি মূলত ছোট আকারের পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর (এসএমআর) ও অ্যাডভান্সড মডুলার রিঅ্যাক্টর (এএমআর) নির্মাণকে ঘিরে। এগুলো প্রচলিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় ছোট, দ্রুত নির্মাণযোগ্য ও কম ব্যয়বহুল।
এসএমআর সাধারণত প্রচলিত পানিভিত্তিক শীতলীকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, আর এএমআর-এ নতুন জ্বালানি বা শীতলীকরণ ব্যবস্থা থাকতে পারে, যা শিল্প খাতে তাপ সরবরাহসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই চুক্তি কেবল বাণিজ্যিক সাফল্য নয়, বরং বৈশ্বিক বাজারে তাদের পারমাণবিক প্রযুক্তির রপ্তানি বৃদ্ধির একটি সুযোগ। মার্কিন প্রশাসন ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন চারগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০০ গিগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৪০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।

রিঅ্যাক্টর নির্মাণে সময়
বিশ্বব্যাপী একটি রিঅ্যাক্টর নির্মাণে গড়ে সাত বছর সময় লাগে। চীন ৫-৬ বছরের মধ্যে রিঅ্যাক্টর নির্মাণে সক্ষম হয়েছে, আর জাপান ফুকুশিমার পর নতুন নিরাপত্তা বিধি কার্যকর হওয়ার আগে মাত্র ৩-৪ বছরে কিছু রিঅ্যাক্টর নির্মাণ করেছিল।