বিএমইউতে আহত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সিএমই প্রোগ্রাম

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) সব ধরনের আহত রোগীদের সর্বাধুনিক জরুরি চিকিসাসেবা নিশ্চিতে ‘এসেনশিয়াল অফ ট্রমা কেয়ার ইন দ্য ইমার্জেন্সি রুম’ বিষয়ক সিএমই প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ এবং প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া এর যৌথ উদ্যোগে এই প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়।
আয়োজনে বিএমইউ ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে বাংলাদেশে সাত হাজার মানুষ মারা যায়। আহতদের সংখ্যা এর তিনগুণ। অন্যান্যভাবে আহতদের সংখ্যা তো রয়েছেই। এই অবস্থায় আহত রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে জীবন বাঁচাতে উন্নত ইমার্জেন্সি রুম বা ইমার্জেন্সি মেডিসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশে এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য আধুনিক ইমার্জেন্সি সেবা নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র কক্সবাজারে আহত রোগীদের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ইমার্জেন্সি মডেল ওয়ার্ড চালু রয়েছে। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ আহত রোগীদের বিশ্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের বিরাট সুযোগ রয়েছে। আমাদেরকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
বিএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, ‘ট্রমা চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার সংমিশ্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি বিভাগে সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একজন রোগীর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের শিক্ষামূলক আয়োজন আরও বেশি হওয়া দরকার।’
জরুরি পরিস্থিতিতে ট্রমা রোগীর সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা কি হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আসাহি মাকসুরা হোসাইন বলেন, ‘আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবিসিডিই বা এয়ারওয়ে, ব্রিথিং, সারকুলেশন, ডিসঅ্যাবালিটি, এক্সপোজার পদ্ধতি এখন ট্রমা কেয়ারের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসকরা উন্নত বিশ্বে ব্যবহৃত কৌশলগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন এবং বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেন।’
ডা. আসাহি মাকসুরা আরও বলেন, ‘ট্রমা রোগীদের ক্ষেত্রে গোল্ডেন আওয়ার বা প্রথম এক ঘণ্টার চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রোগীকে দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া গেলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদের অবশ্যই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং প্রোটোকল অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ট্রমা কেয়ার শুধুমাত্র জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের বিষয় নয়, এটি সার্বিকভাবে সব চিকিৎসকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সার্জারি, অর্থোপেডিকস, নিউরোসার্জারি, রেডিওলজি এবং এনেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় রোগী দ্রুত চিকিৎসা পেতে পারে।’
সিএমইউতে ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগ চালু সময়েরই দাবি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জরুরি বিভাগে ট্রমা চিকিৎসার মূলনীতি বিষয়ক সিএমইটি অত্যন্ত সময় উপযোগী। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে জরুরি ও ট্রমা কেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ইনজুরিতে আহত রোগীদের দক্ষ ট্রমা চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি। সেই লক্ষ্য পূরণে ট্রমা চিকিৎসার সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করার কৌশল নির্ধারণে এ ধরনের সিএমই ভূমিকা রাখবে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য ট্রমাজনিত ইনজুরির হার ক্রমাগত বাড়ছে। তাই, জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের ট্রমা কেয়ার সম্পর্কে হালনাগাদ জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের সিএমই চিকিৎসকদের দক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজকের সিএমইতে প্রাথমিক ট্রমা কেয়ার এবং জরুরি কক্ষের ভূমিকা, গোল্ডেন আওয়ার কনসেপ্ট এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার কৌশল, এবিসিডি পদ্ধতির ব্যবহার, ট্রমা রোগীদের সঠিক তদারকি ও রেফারাল সিস্টেম, প্রোটোকল ভিত্তিক চিকিৎসার গুরুত্ব, বাংলাদেশে ট্রমা কেয়ারের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইত্যাদি আলোচিত হয়।
আহত রোগীদের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বাধুনিক জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বাস্তবধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আসাহি মাকসুরা হোসাইন।
অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইকবাল মাহমুদের সঞ্চালনায় বিএমইউর প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আলী ফয়সাল, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মো. শাহিদুল হাসান, প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া-এর ইলেকটেড সভাপতি ডা. শাকিল ফরিদ, হসপিটাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আকতারুজ্জামান, প্লাস্টিক সার্জন ডা. তৌফিক এলাহী প্রমুখ এবং বিএমইউর অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ছাত্র-ছাত্রী এসময় উপস্থিত ছিলেন।