নতুন করে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ল ইরান

পারমাণবিক কর্মসূচিকে পুনরায় সক্রিয় করার কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে ইউরোপের তিন শক্তিধর দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। খবর এএফপির।
এই তিনটি ইউরোপীয় দেশই ২০১৫ সালের যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) নামক একটি চুক্তির স্বাক্ষরকারী এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা। সম্প্রতি এই তিন দেশ অভিযোগ করেছে যে ইরান চুক্তির অধীনে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
এর আগে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছিলেন, তিনি নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ঠেকানোর জন্য ইউরোপীয় শক্তিধর দেশগুলোকে একটি ‘ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ’ প্রস্তাব দিয়েছেন।
এদিকে, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বর্তমান নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পর বলেন, ‘আমরা (ইরানকে) এখনই পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করছি।’ তবে তিনি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কূটনৈতিক আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন। নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের ওই অধিবেশনে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা একত্রিত হবেন।
নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির আগে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসরায়েলি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন মাসের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো আবারও আরোপ করা হবে। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত শুক্রবার বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বিকল্প এখনো খোলা আছে।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘে পাঠানো একটি চিঠিতে ইউরোপীয় ওই তিন দেশ ইরানকে যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার (জেসিপিওএ) অধীনে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে, যার মধ্যে রয়েছে চুক্তিতে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ৪০ গুণেরও বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করা।
ইউরোপীয় শক্তি এবং তেহরানের মধ্যে একাধিক কূটনৈতিক আলোচনা সত্ত্বেও, পশ্চিমা এই তিন দেশ জোর দিয়ে বলেছে যে, এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০১৫ সালের চুক্তি এখন অকার্যকর
২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে আসে এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করে। এর ফলে বহু কষ্টে অর্জিত ২০১৫ সালের চুক্তিটি এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
পশ্চিমা শক্তিগুলো এবং ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে, যদিও ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসার পর তেহরানও ধীরে ধীরে চুক্তির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে এবং পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করে। জুন মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধের পর থেকে এ নিয়ে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছে।

এই যুদ্ধের কারণে তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনাও ব্যাহত হয় এবং ইরানকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করতে উৎসাহিত করে। এর পরপরই ভিয়েনা-ভিত্তিক জাতিসংঘের এই সংস্থার পরিদর্শকরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি ত্যাগ করেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর পারমাণবিক স্থাপনার ওপর আক্রমণ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আইএইএ-তে একটি খসড়া প্রস্তাব এনেছিল ইরান, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা সেটি প্রত্যাহার করে নেয়।
জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বোমা হামলা শুরু করে, যার ফলে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।